ডিজিটাল এই যুগে মুহুর্তগুলো ফ্রেমবন্দী করার জন্য অথবা ভিডিওগ্রাফির জন্য সবাই ক্যামেরার উপর নির্ভরশীল। প্রানবন্ত সুন্দর ফটো অথবা ভিডিও তৈরির জন্য উন্নত মানের ক্যামেরার চাহিদা এখন অনেক। বাজারে যেসব ক্যামেরা পাওয়া যাচ্ছে তাদের মধ্যে জনপ্রিয় দুই ধরনের ক্যামেরার একটি হচ্ছে মিররলেস ক্যামেরা এবং অন্যটি ডিএসএলআর ক্যামেরা। আজকে আমরা এই দুটি ক্যামেরার তুলনামূলক আলোচনা করবো, আর জানার চেষ্টা করবো আপনার ফটোগ্রাফি অথবা ভিডিওগ্রাফির জন্য কোনটি সেরা।
মিররলেস ক্যামেরা :
মিররলেস নাম থেকে মোটামুটি আন্তাজ করা যায় এই ক্যামেরাতে কোনো মিরর নেই। মিররলেস ক্যামেরায় তোলা ফটো সরাসরি স্কিনে দেখা যায়। যার ফলে এই ক্যামেরায় মিরর ব্যবহার এর প্রয়োজন হয় না। মিরোরলেস ক্যামেরার সবচেয়ে ভালো দিক হলো এটি অনেক হালকা এবং উন্নত প্রযুক্তি দ্বারা নির্মিত। যার কারণে আপনার ফটো বা ভিডিও এর কোয়ালিটি নিয়ে কোনো নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। যদিও একই কনফিগারেশন এর ডিএসএলআর ক্যামেরা ও মিররলেস ক্যামেরা মধ্যে ডিএসএলআর ক্যামেরা বেশি সাশ্রয়ী। বর্তমানের মিররলেস ক্যামেরায় যুক্ত হয়েছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি যেকোনো আলোতে আপনাকে সুন্দর ও ঝকঝকে ফটো দেবে। এই ক্যামেরা অধিক পরিমানে আলো ধারণ করতে সক্ষম। কারণ মিররলেস হওয়ায় এখানে আলো তেমন একটা প্রতিফলন হয় না। কোনো নয়েজ ছাড়া এই ক্যামেরা দিয়ে আপনি ফটো তুলতে পারবেন। অটো ফোকাস এর ক্ষেত্রে মিররলেস ক্যামেরায় এক ধরনের সেন্সর ব্যবহার করা হয় যার কারণে দ্রুত ফেস শনাক্ত করতে সক্ষম। মিররলেস ক্যামেরায় শাটার না থাকার কারণে ফটো তোলার সময় বস্তুর স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। উচ্চ মানের ইমেজ সেন্সর ব্যবহার এর কারণে মিররলেস ক্যামেরায় তোলা ফটো ও ভিডিও কোয়ালিটি অন্যান্য যেকোনো ক্যামেরার চেয়ে এগিয়ে।ভিডিও করার ক্ষেত্রে অটো ফোকাস ফেসিলিটি বেশি থাকায় মিররলেস ক্যামেরায় ধারন করা ভিডিও বেশি কোয়ালিটি সম্পন্ন হয়ে থাকে। কারণ এখানে ফোকাস ঠিক করে ভিডিও করার ঝামেলা পোহাতে হয় না। মিররলেস ক্যামেরা দিয়ে হাই রেজুলেশন ভিডিও ধারণ করা যায়। যা অন্য ক্যামেরার তুলনায় বেশি কোয়ালিটি সম্পন্ন। তাই শুটিং করার ক্ষেত্রে অন্য যেকোনো ক্যামেরার চেয়ে মিররলেস ক্যামেরা ভালো।
ডিএসএলআর ক্যামেরা:
ডিএসএলআর পূর্ণরূপ হচ্ছে ডিজিটাল সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স। ডিএসএলআর ক্যামেরা সম্পর্কে ধারনা নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। ডিজিটাল যুগের প্রথম অত্যাধুনিক ক্যামেরা হলো ডিএসএলআর। এখনো ডিএসঅএলার এর জনপ্রিয়তা একটুও হ্রাস পায়নি। ডিএসএলআর এর প্রধান প্রযুক্তি হচ্ছে এসএলআর। এর সাথে ডি এর কোনো কার্যকরী যোগাযোগ নেই। যে প্রক্রিয়ায় ছবি তোলার আলোটা আসে এই প্রক্রিয়াটাই হচ্ছে মূলত এসএলআর। ডিএসএলআর ক্যামেরা কোয়ালিটি মেইনটেইন করা হয় মেগা পিক্সেল এর সাহায্যে। বেশি মেগা পিক্সেল এর ক্যামেরা সাধারণ মানের দিক দিয়ে ভালো হয়।সাধারণ প্রত্যেকটা ক্যামেরাতেই আলো লেন্সের মাধ্যমে ক্যামেরায় প্রবেশ করে। ডিএসএলআর ও এর ব্যাতিক্রম নয়। তবে ডিএসএলআর ক্যামেরাতে মিররযুক্ত হওয়ায় আলো লেন্সের মাধ্যমে প্রবেশ করে ৪৫ ডিগ্রি অবস্থানে থাকা পাশাপাশি মিরর বা আয়নাতে গিয়ে আলো আপতিত হয়। সেখান থেকে ক্যামেরার ভেতরে উপরের দিকে থাকা ম্যাটে ফোকাসিং স্ক্রিনের মাধ্যমে কনডেনসারের মধ্যে দিয়ে পেন্টাপ্রিজমে প্রবেশ করে। যেহেতু এখানে মিরর ব্যবহার করা হয় তাই ডিএসএলআর ক্যামেরা আলো প্রতিফলিত হয়ে ক্যামেরায় প্রবেশ করে। তাই কম আলোয় তুলনামূলক ভালো ছবি তোলা বা ভিডিও করা যায় না। তবে আলোর ভালো ব্যবস্থা থাকলে এই ক্যামেরা যেকোনো ক্যামেরার চেয়ে ভালো ছবি ও ভিডিও দিতে সক্ষম। যদি লেন্সের মাধ্যমে পর্যাপ্ত আলো ডিএসএলআর ক্যামেরা প্রবেশ করতে পারে।তাহলে ভালো মানের ছবি বা ভিডিও পাওয়া যাবে। তাই লাইটিং এর ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হবে।
ডিএসএলআর ও মিররলেস ক্যামেরার মধ্যে পার্থক্য:
ডিএসএলআর ও মিররলেস ক্যামেরার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে তবে তার মধ্যে দৃশ্যমান একটি পার্থক্য হলো তার ওজনে। ডিএসএলআর ক্যামেরা তুলনামূলক ভারী হয়। আবার একই কোয়ালিটি সম্পন্ন একটি ডিএসএলআর ক্যামেরার চেয়ে একটি মিররলেস ক্যামেরার দাম বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানে বড় বড় ক্যামেরা নির্মাতা কোম্পানি যেমন সনি, ক্যানন, নিকন এর মতো কোম্পানি ডিএসএলআর ক্যামেরা তৈরীতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেনা। ক্যামেরা ব্র্যান্ড গুলো নতুন ডিসএলআর এর উৎপাদন একদম বন্ধ না করলেও খুব অল্প পরিমাণে উৎপাদন করে যাচ্ছে। অটো ফোকাস এর ক্ষেত্রে ডিএসএলআর সহজে ফেফ শনাক্ত করতে পারে। তাই অটো ফোকাস এর দিক দিয়ে ডিএসএলআর এর দক্ষতা অবশ্যই ভালো বলতে হবে। ইমেজ প্রিভিউ এর জন্য ডিএসএলআরে অপটিক্যাল ভিউফাইন্ডার সেন্সর থাকে যা ক্যামেরা দিয়ে ছবি ক্যাপচার করতে সাহায্য করে।ডিএসএলআর এর ইমেজ স্থিতিশীলতা শাটারের গতির ওপর নির্ভর করে। শাটারের গতি যত বেশি হবে ইমেজ স্থিতিশীলতাও তত বেশি হবে। ভালো মানের ডিএসএলআর ক্যামেরা দ্বারা হাই রেজুলেশন ছবি ও ভিডিও করা সম্ভব। ডিএসএলার দিয়ে ভিডিও করার সময় অটো ফোকাসের ক্ষেত্রে কিছুটা ঝামেলা পোহাতে হয়। ডিএসএলআর ভিডিও রেকর্ডিংয়ের সময় মিরর আপেরস্টেজের সাথে শনাক্ত করতে পারে না। তাই অটো ফোকাস ঠিক রাখা কিছুটা কঠিন। শুটিং করার জন্য ডিএসএলআর ক্যামেরা ভালো অপশন হতে পারে।
উপসংহার
আপনি যদি ছবি বা ভিডিও করার জন্য নতুন ক্যামেরা কিনতে কিন্তে চান সেক্ষেত্রে আশা করছি আপনি বুঝে গেছেন আপনার জন্য কোন ক্যামেরাটা উপযুক্ত হতে পারে। বর্তমান সময়ে প্রত্যেকটা মানুষ তার অতিবাহিত করা সময়টাকে সুন্দর ক্যামেরা মাধ্যমে ফ্রেম বন্দি করে রাখতে চায়।তাছাড়া ইউটিউব এর মত প্লাটফর্ম থেকে টাকা উপার্জন করার জন্য ইউটিউব কে প্রফেশন হিসাবে বেছ নেন। আর ইউটিউবে কোয়ালিটি সম্পন্ন ভিডিও ছাড়ার জন্য অথবা ভিউয়ারদের এপ্রিশিয়েট পাওয়ার জন্য ভালো ক্যামেরার কোনো বিকল্প নেই। তাই বাজারে ক্যামেরার অনেক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে হাই কোয়ালিটি সম্পন্ন ক্যামেরার চাহিদাটাই বেশি। এখন আইফোন ১৫ এর যুগ হলেও ডিজিটাল ক্যামেরা বা মিররলেস ক্যামেরার চাহিদা কোনো ডিজিটাল গ্যাজেট পুরন করতে পারবে না। তাই বলা যায় দিন দিন ক্যামেরার চাহিদা কমবে না উলটো বাড়বে। এখনকার উন্নত মানের ক্যামেরা হয়তো ভবিষ্যতে আরো উন্নত হয়ে আপডেট হয়ে আসবে এবং শুটিং প্রফেশন বা ফটোগ্রাফি প্রফেশন কে আরো উচ্চতায় নিয়ে যাবে। যাইহোক আজকের বিষয় ছিল ডিএসএলআর ও মিররলেস ক্যামেরার তুলনামূলক বিশ্লেষণ। আশা করি আপনারা এই ব্লগটি পড়ার পর এই দুই ক্যামেরা সম্পর্কে স্পষ্ট একটি ধারণা পেয়েছেন।