কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নতুন যুগ: চ্যাট জিপিটি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নতুন যুগ: চ্যাট জিপিটি

ChatGPT Dark theme logo

চ্যাট জিপিটি হলো OpenAI দ্বারা তৈরি করা কৃত্রিম  বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ভাষা মডেল যা ২০২২ সালের ৩০ নবেম্বর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। মূলত মানুষের সৃজনশীল কাজ গুলো সহজ করার উদ্দেশ্য চ্যাটজিপিটি তৈরি করা হয়েছে,  এবং OpenAI এর চ্যাট জিপিটি বর্তমান বিশ্বে  সারা ফেলতে ব্যাপক ভাবে সফল হয়েছে। কেননা ২০২৩ সালের শেষের দিকে একটি সূত্র প্রকাশ করে যে  দৈনিক প্রায় ১৫ লক্ষ্য নতুন ইউজার বা ব্যবহারকারী বিভিন্ন সেবা নেওয়ার উদ্দেশ্য চ্যাট জিপিটি ভিজিট করেন।

চ্যাট জিপিটি কি?

চ্যাট জিপিটি  হলো GPT ( Generative Pre-trained Transformer) পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তেরি করা একটি অত্যাধুনিক চ্যাট বট বা AI, যার সিদ্ধান্ত গ্রহন করার ক্ষমতা রয়েছে,  পাশাপাশি এটি মানুষের ন্যায় কথোপকথন করতে সক্ষম। AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো এমন এক ধরনের প্রযুক্তি,  যা মানুষের ন্যায় একি সাথে সমস্যার সমাধান এবং চিন্তা করতে সক্ষম।

চ্যাট জিপিটি-কে কিভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে? 

চ্যাট জিপিটিকে Machine Learning System এর মাধ্যমে,  অনলাইনে থাকা প্রায় 45TB লিখিতো তথ্য এবং 175 Billion কথোপকথনের ধরনের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে! অর্থাৎ চাইলেই চ্যাট জিপিটিকে একটি বিশ্বকোষ বলা যায়। কেননা ইন্টারনেটে অবস্থিত সকল তথ্যই এর মধ্যে রয়েছে।  অন্য দিকে চ্যাট জিপিটির ব্যবহার-কারীর সংখ্যা যত বেশি বৃদ্ধি পাবে,  চ্যাট জিপিটি ততটাই বেশি মানব সূলভ হয়ে উঠবে। অর্থাৎ চ্যাট জিপিটি এমন একটি AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন চ্যাট-বট, যে কথোপকথনের মাধ্যমে নিজের ভুল সংশোধন এবং একি সাথে নিজেকে আরো বেশি পরিণত করতে সক্ষম।

চ্যাট জিপিটি কিভাবে কাজ করে?

আপনার যদি কম্পিউটার সম্পর্কে একটু ভালো ধারণা থাকে তবে আপনার জানার কথা যে, কম্পিউটার সংখ্যা পদ্ধতি ( তথা  0,1)  ব্যতীত অন্য কিছু সরাসরি বুছতে পারেনা। চ্যাট জিপিটিও অনেকটাই একই রকম কাজ করে। অর্থাৎChat GPT সংখ্যা পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে কাজ করে। যখন Chat GPT কে কোনো প্রশ্ন করা হয়। তখন সে, ঐ প্রশ্ন বা টেক্সটিকে অনেক গুলো ছোট অংশে বিভক্ত করে। যাকে টোকেন বলা হয়। পরবর্তীতে সেই প্রত্যেকটি টোকেন-কে সংখ্যা পদ্ধতিতে রূপান্তর করে, এবং পরবর্তীতে মডেলটি বিশেষ আর্কিটেকচার ব্যবহার করে একটি টোকেন কিভাবে অন্য একটি টোকেনের সাথে  সম্পর্কিত তা বোঝে। এর পরের ধাপে ইনপুটে প্রদত্ত টোকেন গুলোর উপর ভিত্তি করে তাদের সাথে সম্পর্কিত অনেকগুলো টোকেন নির্বাচন করার মাধ্যমে  উত্তর বা আউটপুট গঠন করে, এবং সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করে কয়েকবার উত্তরটি যাচাই-বাছাই বা প্রক্রিয়া করণের মাধ্যমে আমাদের নিকট তা প্রকাশ করে। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে Chat GPT' র আনুমানিক ০৭ থেকে ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

সংক্ষেপে GPT-4o:

GPT-4o হলো চ্যাট জিপিটির আরো উন্নত ভার্সন। যেখানে চ্যাট জিপিটির পূর্বের ভার্সন তথা GPT-3.5 শুধু মাত্র টেক্সট ম্যাসেজ বুঝতে সক্ষম ছিলো, সেখানে GPT-4o তে ব্যাপক উন্নতি লক্ষ্য করা যায়।

GPT-4o এর কিছু উল্লেখ্য যোগ্য বৈশিষ্ট্য:

১. রিয়েল টাইম ভিশন ক্যাপাভিলিটি। অর্থাৎ এখন থেকে সরাসরি ক্যামেরার মধ্যমে দেখানো যেকোনো সমস্যার সমাধান Chat GPT করতে সক্ষম হবে।

২. রিয়েল টাইমে ৫০ এর ও অধিক ভাষা অনুবাদ করতে সক্ষম হবে।

৩. সরাসরি মিটিং এ যোগদান,মতামত এবং সিদ্ধান্ত প্রদানে সক্ষম হবে।

৪. নিজস্ব ডেস্কটপ অ্যাপ্লিকেশন। যেটাকে চাইলেই রিয়েলটাইম কোডিং এসিস্ট্যান্ট হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ থাকছে।

৫. ভয়েস-কমান্ড অনুসরণ এবং রিয়েলটাইম কথোপকথন। 

উক্ত বৈশিষ্ট্য গুলো GPT-4o তে আমরা উপভোগ করতে পারবো।

Chat GPT কি মানুষের চাকরি হারানোর কারণ হবে?

১৭৬৯ সালে যখন প্রথমবারের মতো বানিজ্যিক ভাবে বাষ্প ইঞ্জিন (Steam Engine)  চালু করা হলো। তখন নিন্ম শ্রেণীর সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে একটা নেতিবাচক আশঙ্কা তৈরি হলো। শ্রমিকরা ভেবেছিলো এবার হয়তো ব্যাপক ভাবে তাদেরকে ছাটাই করা হবে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেলো 'বাষ্প  ইঞ্জিন',  ইঞ্জিন প্রস্তুতকারক শীল্প ক্ষেত্রে   রীতি মতো একটা বিপ্লব নিয়ে আসলো। কাজের সুযোগ এতটাই বেড়ে গেলো যে বিশাল আকারের একটি বেকার জনগোষ্ঠীকেও এই প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান গুলোতে চাকরির সুযোগ করে দেওয়া হলো। এই পুরাতন ঘটনা'টি বলার কারণ হলো, The World Economic Forum ২০২০ সালের অক্টোবরের ২০ তারিখে পাবলিশ হওয়া “The Future Of Job Report 2020” এ উল্লেখ করা হয়েছে যে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় ৮৫ মিলিয়ন মানুষ, AI এর কারনে তাদের চাকরি হারাবেন, এবং এর বিপরীত নতুন করে প্রায় ৯৭ মিলিয়ন মানুষের জন্য নতুন কর্ম সংস্থান তৈরী হতে পারে। এর মধ্যে এমন সব চাকরিও থাকবে যেগুলোর বর্তমানে কোনো অস্তিত্বই নেই। যেমন একটা বিশাল জনগোষ্ঠিকে নিয়োগই দেওয়া হবে শুধু মাত্র সঠিক ভাবে AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে নির্দেশনা প্রদান করার জন্য। একটি উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা আরো একটু পরিষ্কার করা যাক।

যখন প্রথমবারের মতো বানিজ্যিক ভাবে রোবোটিক আর্ম বা কৃত্রিম হাতের ব্যবহার শুরু হলো, তখন বিভিন্ন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বড় পরিসরে কর্মচারী ছাঠাই করা শুরু করে। কেননা কৃত্রিম হাত মানুষের থেকে দ্রুত এবং বেশি সংখ্যক কাজ সম্পাদন করতে পারে। আবার কৃত্রিম হাত পরিচালনা, রক্ষনা-বেক্ষন, পরিষ্কার করা, ত্রুটি সংশোধন ইত্যাদি বিভিন্ন কাজের জন্য নতুন করে আরো একটা বেকার জনগোষ্ঠীকে  নিয়োগ দেওয়া হয়। অর্থাৎ প্রাথমিক ভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য অনেকেই চাকরি হারাবেন, এবং এর বিপোরিতে নতুন করে আরো অনেক কর্ম সংস্থানের সূচনা হবে।

চ্যাট জিপিটির খারাপ দিক:

মানুষ অলস প্রকৃতির হওয়ার ফলে ডিজাইন, রিসার্চ এর মতো জটিল এবং সৃজনশীল কাজগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা  দ্বারা  সহজেই করিয়ে নিতে চাইবে। আর মানব মস্তিষ্ক এরূপ পদ্ধতিতে পরিচালিত হয় যে, আমরা যদি দীর্ঘদিন নিজেদেরকে জটিল এবং সৃজনশীল কাজ গুলো থেকে বিরত রাখি, তবে এক পর্যায়ে গিয়ে আমাদের সৃজনশীলতা লোপ পাবে বা ব্যাপক হাড়ে কমে যাবে। আর এরূপ অবস্থায় আমরা একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্য আটকা পড়বো। ধীরে ধীরে নতুন মৌলিক আবিষ্কারের সংখ্যা কমে আসবে। যার ফলে মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হবে। অর্থাৎ যদি  কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেমন  চ্যাট জিপিটির মতো প্রযুক্তি গুলোর নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নিশ্চিত করা না হয়, তবে এটি আমাদের সৃজনশীলতায় একটি খারাপ প্রভাব বিস্তার করবে।

মানব সভ্যতার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ? 

চ্যাট জিপিটি যখন প্রথমবারের মতো সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়, তখন প্রায় প্রতিটি দেশের স্টুডেন্টরা তাদের 'হোম ওয়ার্ক',আর্টিকেল ইত্যাদি লিখার জন্য চ্যাট জিপিটির ব্যবহার শুরু করে। যা মোটেও ভালো কোনো কাজ ছিলো না। কেননা এই পদ্ধতিতে তারা সাময়িক ভাবে শিক্ষা প্রথিষ্ঠানে ভালো ফলাফল করতে সক্ষম হলেও তাদের কখনোই ওই টপিক গুলা শিখা হতো না। এই সমস্যাটি পরবর্তী এতোটাই বেড়ে যায়, যে অনেক দেশ চ্যাট জিপিটির ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট বয়স সীমার একটি আইন বা নিয়ম তৈরি করে। আবার অন্য দিকে চ্যাট জিপিটি আসার পরে অনেকেই নিজেদের জ্ঞানের ভান্ডার আরো সমৃদ্ধ করার জন্য এটির ব্যবহার করছেন, অনেকে আবার নিজেদের ব্যবসা এবং কর্মক্ষেত্রে এর ব্যবহার করছেন কাজ সহজ করে তুলার জন্য। অর্থাৎ ভবিষ্যতে আমরা কিভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করবো তার উপরেই নির্ভর করছে, যে এটা আমাদের জন্য অভিশাপ নাকি আশীর্বাদ। যদিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তেরী করা হয়েছে মানুষের কাজ আরো সহজ করার জন্য। তারপরও আমার মতে সকল দেশের উচিত চ্যাট জিপিটির মতো শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গুলোর ব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণের উপর নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতা প্রয়োগ করা উচিৎ। এতে করে খারাপ কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার অনেক অংশেই কমে আসবে।

FAQs:

চ্যাট জিপিটি কি?

চ্যাট জিপিটি হলো GPT ( Generative Pre-trained Transformer) পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তেরি করা একটি অত্যাধুনিক চ্যাট বট বা AI, যার সিদ্ধান্ত গ্রহন করার ক্ষমতা রয়েছে, পাশাপাশি এটি মানুষের ন্যায় কথোপকথন করতে সক্ষম।

চ্যাট জিপিটি প্রতিষ্ঠাতা কে?

ChatGPT এর পিছনে মূল প্রতিষ্ঠান হল OpenAI। OpenAI একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এর বিকাশ ও প্রচার নিয়ে কাজ করে। OpenAI এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে রয়েছেন এলন মাস্ক, স্যাম অল্টম্যান, গ্রেগ ব্রকম্যান, ইলিয়া সুতস্কেভার, জন ক্লার্ক, এবং ওয়োজি জারেমবস্কি।

চ্যাট জিপিটি কিভাবে ব্যবহার করবো?

https://chat.openai.com/auth/login করুন। আপনি সফলভাবে চ্যাট জিপিটি এর জন্য সাইন আপ করার পর আপনার ব্রাউজার থেকে সহজেই চ্যাট জিপিটি ব্যবহার করতে পারবেন।

চ্যাট জিপিটির CEO কে?

চ্যাট জিপিটির নির্দিষ্ট কোনো CEO নেই। কেননা এটি OpenAI নামক প্রতিষ্ঠানের একটি প্রডাক্ট মাত্র, এবং OpenAI এর CEO হলে স্যাম অল্টম্যান।

GPT-4o ফ্রিতে কি ফ্রিতে ব্যবহার করা যায়?

না, GPT-4o এর সুবিধা নিতে হলে আপনাকে অবশ্যই অর্থ প্রদান করতে হবে।

চ্যাট জিপিটি এর পূর্ণরূপ কি?

চ্যাট জিপিটি এর পূর্ণরূপ হলো জেনারেটিভ প্রি-ট্রেনড ট্রান্সফরমার।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post