ক্রিয়েটিভ আর্টিস্টদের জন্য Ai আশির্বাদ নাকি অভিশাপ?

ক্রিয়েটিভ আর্টিস্টদের জন্য Ai আশির্বাদ নাকি অভিশাপ?


বিংশ শতাব্দীর পর। করোনা মহামারির পরে যে জিনিসটা সব চেয়ে বেশি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরেছে তা হলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা Ai। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যখন কোভিড ১৯ ভাইরাসের মতো প্রত্যেকটা ফিল্ডে এন্ট্রি নিচ্ছিলো তখন মানুষের ধারনা ছিলো এটি বোধহয় ক্রিয়েটিভ ফিল্ডে তেমন সুবিধা করতে পারবেনা। এর কারনও ছিল বটে। মানুষের সাথে রোবট এর বিষাল তফাৎ করে দেয় যে যায়গাটা সেটি হলো ইমোশন, চিন্তাশক্তি, সৃজনশীলতা যা ক্রিয়েটিভ ফিল্ডের অপরিহার্য বিষয় বস্তু। Ai এবং ক্রিয়েটিভ ফিল্ডের মধ্যে এই আকাশ পাতাল তফাৎ এর কারনে মানুষ যখন ধারনা করে নিয়েছিলো Ai ক্রিয়েটিভ ফিল্ডে খুব বেশি ইম্প্যাক্ট রাখতে পারবেনা, ঠিক তখনই Ai সবাইকে ভুল প্রমান করে দিয়ে ক্রিয়েটিভ ফিল্ডকেই সব চেয়ে বেশি ত্বরান্বিত করেছে। বর্তমানে Ai ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, মোশন গ্রাফিক্স, এনিমেশন, ভিডিও এডিটিং থেকে শুরু ক্রিয়েটিভ ফিল্ডের যেসব জিনিস পত্র করতে মানুষকে স্কিল শিখতে হতো। তা এখন প্রম্পট দেয়ার মাধ্যমে মুহূর্তেই হয়ে যাচ্ছে। ফলে ক্রিয়েটিভ ফিল্ডের কঠিন কাজ গুলো সাধারণ মানুষের হাতে নাগালে চলে এসেছে যার প্রমাণ ইতিমধ্যে আপনার আশেপাশেই রয়েছে। এতে করে Ai একদিকে যেমন আমাদের জন্য আশির্বাদ তেমনি অন্যদিকে অভিশাপও বটে। কেননা একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে Ai আশেপাশের ক্রিয়েটিভ ফিল্ডের এন্ট্রি লেভেল এর জব গুলো যেমন ব্যাকগ্রাউন্ড রিমোভ করা, ভিডিওতে কাট করা, ফটো ম্যানুপুলেশন ইত্যাদি মনে হচ্ছে, Ai Snap করার পর গায়েব হয়ে যাচ্ছে।


Ai কি তাহলে আমাদের জব রিপ্লেস করে দিবে?

এটির উত্তর একটু কঠিন বটে তবে এটিই সত্য যে Ai অলরেডি আমাদের জব করছে even ২০১৬ সালের রিলিজ হওয়া হলিউড ফিল্ম মরগান এর ট্রেইলার সম্পূর্ণ ভাবে ইডিট করা হয়েছে Ai দিয়ে। তবে এখনি ফ্রাস্ট্রেটেড হওয়ার প্রয়োজন নেই কেননা আমি আগেই বলেছি যে এখন পর্যন্ত  Ai এন্ট্রি লেভেলের জব জব গুলো করতে পারছে। অর্থাৎ একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে Ai নির্দিষ্ট গ্রুপ। যেমন আরো স্পেসিফিক্যালি বললে Poor Skilled গ্রুপকে এর কাজকে রিপ্লেস করেছে। কাজেই আপনি যদি হাইলি স্কিলড কেউ হন তাহলে ভয় পাবার কিছু নেই। কেননা Ai এখনো এতো পাওয়ারফুল হয়ে যায়নাই যে আপনার জব নিয়ে নেবে। বিষয়টি আরো ব্যাখা করে বলছি। ভিডিও এডিটিং এর ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত এরকম কিছু Ai Tool আছে যেগুলা কাট করা, সর্টিং করা, স্পেসিং বা গ্যাপ থাকলে সেগুলা কাট করে ফুটেজ জোড়া দেয়া বা বেসিক লেভেল এর সাউন্ড এডিটিং এবং কালার গ্রেডিং করতে পারে। এখন এই কাজ গুলো যদি একজন প্রো ইডিটরো করতে যায়। তাহলে তার অনেক সময় ব্যায় হতো যেগুলো Ai কম সময়ে করে ফেলছে। ফলে প্রো ইডিটর তার সময় এখন আরো বেশি এডভান্স এবং ক্রিয়েটিভ কাজে ব্যায় করতে পারছে।


এতে করে কাজ Fast Forward হয়ার পাশাপাশি ২টি জিনিস হচ্ছে: 

১/ প্রো ইডিটরে সময় বাচার পাশপাশি সে যেহতু আরো সময় এডভান্স কজের জন্য পাচ্ছে এর ফলে তার কাজ আরো কয়েকগুণ ভালো হচ্ছে। 
২/ যেসব Poor Skilled বা বিগেইনিং লেভেল এর ইডিটর আগে এসব কাজ করতো তারা এখন একটু ডেঞ্জার জোনে পরে গেছে।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে ভাই সব মানুষ তো আর প্রো হবে না even বেশির ভাগ মানুষই তো প্রো লেভেল পর্যন্ত রিচ করতে পারবেনা। এটাই তো প্র‍্যাক্টিক্যাল। তাহলে যারা ডেঞ্জার জোনে আছে তাদের কি উপায় হবে? দেখেন এতদিনে Ai অনেক এডভান্স হয়েছে তবে Ai এখনো ঐ পর্যায় গিয়ে পৌছায় নি যে হিউম্যান ইনভলভমেন্ট ছাড়া স্বংক্রিয়ভাবে আপনার জন্য কাজ করে দিবে। এরকারন হলো Ai প্রায়শই ভুলভাল উত্তর দেয়।


ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়া মাদার তেরেসার AI-generated ছবি


একটু কম্প্লেক্স কন্টেক্সট হলে Ai বুজতে পারেনা। যেমন ইন্টারনেটে মাদার তেরেসার এই ছবিটি বেশ ভাইরাল হয়েছে। এখানে AI কে জেনারেট করতে বলা হয়েছে যে “মাদার তেরেসা পভার্টির বিরুদ্ধে লড়ছে” আর Ai এই ছবিটা জেনারেট করে দিয়েছে।

দ্যা ফিউচার অব জব রিপোর্ট ২০২০

এতক্ষোণের আলোচনা থেকে এটুকু পরিষ্কার যে Ai এর কারনে সবার জব এবং বেশির ভাগ মানুষেরই জব যাবেনা বরং Ai এর কারনে উলটো নতুন জব তৈরী হবে। তবে তাই বলে যে কারো জবই যাবেনা সেটাও কিন্ত ধরে নেয়া যাবেনা। Ai এর কারনে অনেকেরেই জব চলে যাবে। The World Economic Forum ২০২০ সালের অক্টোবরে ২০ তারিখে পাবলিশ হওয়া “The Future Of Job Report 2020” এ বলা হয় যে ২০২৫ সাল নাগাত Ai এর কারনে ৮৫ মিলিয়ন মানুষের জব চলে যেতে পারে এবং ৯৭ মিলিয়ন মানুষের জন্য নতুন কর্ম সংস্থান তৈরী হতে পারে। এর থেকে আমরা অনুমান করতে পারি যে, যারা এই কে এডপ্ট করতে পারবেনা তাদের জবই যাবে। অর্থাৎ এই এর কারনে জব যাবেনা যব যাবে হলো এইকে এডপ্ট না করতে পারার কারনে। Let Me Explained।
দেখেন ফটোশপে জেনেরেটিভ টুল আশারপর থেকে ফটো মেনুপুলেশন এর পুরো গেমই চেঞ্জ হয়ে গেছে এখন তো প্রিমিয়ার প্রোতেও জেনেরেটিভ ফিল আসছে। কাজেই আপনি যদি এগুলা না শিখে আগের মতো তথাকথিত মেনুয়ালি করতে চান সেক্ষেত্রে প্রচুর সময় লাগবে। এখন যে কাজটা মিনিটের মধ্যে শেষ করা যায় সে কাজ করতে যদি আপনি ঘন্টা খানেক সময় লাগান তাহলে আপনাকে কে কাজ দিবে? তাছাড়া এই এর মাধ্যমে ক্রিয়েটিভ ইন্ড্রাষ্টিতে রেভুলশন ঘটছে। এখন আপনি যদি Ai কে এডপ্ট করতে না পারেন তাহলে আপনি পিছে পরে গেলেও Ai কিন্তু আপনাকে রেখে ঠিকই আগে চলে যাবে।

টিচারদের ক্যালকুলেটর বন্ধের জন্য আন্দোলন


আপনাদের মজার একটা গল্প শুনাই ১৯৬৬ সালে গণিতের টিচাররা একবার ক্যালকুলেটর বন্ধের জন্য আন্দোলন করেছিলো। তাদের মতে ক্যালকুলেটর এর কারনে শিক্ষার্থীদের গাণিতিক দক্ষতায় নেতিবাচক প্রভাব পরবে। ফাস্ট ফরওয়ার্ড টু ২০২৪ সাল এখন ক্যালকুলেটর ছাড়া হিসাব নিকাশের কথা চিন্তাও করা যায়না। ক্যালকুলেটর ব্যাবহারের ফলে যেমন গাণিতিক ক্ষেত্রে একটা বুস্ট পাওয়া গেছে। যটিল সমস্যা গুলো সহজেই ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে সমধান করা যাচ্ছে। তেমনি ভাবে ঠিকঠাক মতো Ai ব্যবহার করতে পারলে পারলেও আপনার কাজেও একটা বুস্ট পাবেন এবং আপনার কাজকে নেক্সট লেভেলে নিয়ে যেতে পারবেন।


Post a Comment

Previous Post Next Post