আমরা ফুটেজ ব্যবহার করি যাতে করে আমরা আমাদের স্টোরিকে কে ভিজুয়্যালাইজ করতে পারি।সিনেমা থেকে শুরু করে ডকুমেন্টরি, টিভি শো, নাটক, ওয়েব সিরিজ, মিউজিক ভিডিও, নিউজ প্রোগ্রাম এমনকি পডকাস্টেও ভিজুয়্যালাইজেশনের জন্য ফুটেজ ব্যবহার করা হয়। মোট কথা হলো ভিডিওর এমন কোন ধরন নেই যেখানে স্টোরিটেলিং এর স্বার্থে ভিজুয়্যালাইজেশনের জন্য ফুটেজ ব্যবহার করা হয়না এক্সেপ্ট সাদমান সাদিক ভাইর মনোলগ। কেননা ওনার ভাস্য মতে ওনার ভিডিও হচ্ছে অডিওর মতো। যাইহোক ফুটেজ কে মোটামুটি দুইভাগে ভাগ করা যায় এ রোল ও বি রোল। আপনি ফিল্মেকিং বা ভিডিও প্রডাকশন ইন্ড্রাস্ট্রিতে থাকলে ইতিমধ্যেই এই দুইটি টার্ম সম্মন্ধে জানার কথা। এ-রোল ও বি-রোলের কম্বিনেশনের দ্বারা ফিল্মেকারর ইফেক্টিভলি স্টোরি কনভে করতে পারে বিধায় দর্শকরা ভালো একটা ভিজুয়্যালা এক্সপেরিয়েন্স পায় এবং এঙ্গেজ থাকে।
এ-রোল ও বি-রোলের আবিষ্কার
এ-রোল ও বি-রোল টার্ম দুটি হলিউডের শুরুর দিকের মুভিমেকিং এ ইন্ট্রোডিউস করা হয়। আগেরকার দিনে কিন্তু বর্তমানের মতো ডিজিটালি মেমোরি কার্ডে শুট করার উপায় ছিলোনা। তাই তখনকার সময়ে ফিজিক্যাল ফিল্ম রিলের মাধ্যকে শুট করা হতো। কাজেই তারা তাদের ক্রু দের দুটি আলাদা ইউনিটে ভাগ করে দুটি আলাদা আলাদা রিলের মাধ্যমে শুট করতো। সেই সময়ে ইডিটিং করা ছিলো বেশ কঠিন একটি কাজ। তখন ফিলার হিসাবে বা এক শট হতে আরেকটি শটে ট্রাঞ্জেশন করার জন্য ফিল্মের প্রথম রিলকে কেটে সেই কাটা স্থানে দ্বিতীয় রিলকে বসাতো। এখন এই প্রথম রিলকে বলা হতো এ-রোল ও দ্বিতীয় রিকলকে বলা হতো বি-রোল।
এখন যদিও ডিজিটাল ফিল্মের মাধ্যমে শুট করা হয় তারপরও টার্ম টা কিন্ত এখনো রয়েই গেছে।
এ-রোল কি?
এ-রোল হচ্ছে প্রাইমারি ফুটেজ যেটা স্টোরির উপর নির্ভর করে ভিজুয়্যালাইজ করা হয়। যেকোন ধরনের ভিডিওতে যে মেইন ফুটেজ দেখানো হয় তা হচ্ছে এ-রোল। এটি ফাউন্ডেশনাল ফুটেজ যেটি গল্পের সেন্ট্রাল ন্যারেটিভ ক্যারি করে কাজেই স্ক্রিপ্টিং এর সময় এ-রোল ফুটেজ কে কেয়ারফুলি প্ল্যান করা হয়। এ -রোল ফুটেজ কে স্টোরিটেলিং প্রসেস এর মেরুদন্ড হিসাবে ধরা হয়। এ-রোল ব্যবহার করে সম্পুর্ন স্টোরি কাভার করে ভিডিও বানানো গেলেও এতে কিছু সমস্যা আছে যেমন আপনি যদি গল্প অনুযায়ী শুধু প্রাইমারি ফুটেজ দেখান তাহলে ভিডিও অনেক বোরিং লাগবে তাছাড়া ডায়লগ দেয়ার সময় ফাম্বেল দেয়া সহ গল্পে সেটিং সেট এবং টোন ক্রিয়েট করতে না পারার ফলে ভিডিওতে দর্শক ধরে রাখা কঠিন হয়ে পরবে। এই সমস্যা দূর করতে বি-রোল কাম টু দ্যা সিন।
বি-রোল কি?
বি-রোল হচ্ছে সাপ্লিমেন্টাল ফুটেজ যেটা এ-রোল কে ভিজুয়্যালাইজেশনে এ সাপোর্ট দেয়। উদাহরণ স্বরুপ আমি আমার ক্যামেরা নিয়ে করা ভিডিওতে এ-রোল ফুটেজে ক্যামেরা নিয়ে কথা বলছিলাম তখন এ-রোল ফুটেজকে ভিজুয়্যাল সাপোর্ট দেয়ার জন্য বি-রোল ফুটেজে ক্যামেরার দেখিয়ে ছিলাম। বি-রোল ভিডিও প্রডাকশনে এ স্টোরিটেলিং এনহ্যান্স করার পাশাপাশি কন্টেক্সট প্রধান করে থাকে এবং অডিয়েন্স এঙ্গেজমেন্ট ধরে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও আমরা যখন এ-রোল ফুটেজ দেখতে থাকি তখন লিমিটেড পার্সপেক্টিভ এক্সপেরিয়েন্স করতে পারি কিন্ত যখন বি-রোল ফুটেজ, এ-রোল ফুটেজের সাথে মার্জড করে দেখানো হয় তখন আমাদের পার্সপেক্টিভ এক্সপান্ড হয় ফলে আরো বেশি ডিটেইলস থাকে যার কারনে আমরা গল্পটাকে আরো বেশি ভালোভাবে এক্সপেরিয়েন্স করতে পারি।প্রপারলি বি-রোল ফুটেজ ব্যবহার করতে পারলে আপনার ভিডিও কোয়ালিটি কয়েকগুন ভালো করা সম্ভব।
এ-রোল এবং বি-রোল এর মধ্যে পার্থক্য কি?
এ-রোল এবং বি-রোলের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো এদের পারপাস এবং রোলে। অর্থাৎ এ-রোল হলো প্রাইমারি ফুটেজ এবং বি-রোল সেকেন্ডারি ফুটেজ। তবে বি-রোল সেকেন্ডারি ফুটেজ বিধায় এটিকে কম গুরুত্বপূর্ন ভাবার উপায় নেই। কেননা এ-রোলের ন্যারেশন করা গল্পে বি-রোল আমাদের ইডিটিং প্রসেসে ফ্লেক্সিবিলিটি দেয়ার পাশাপাশি স্টোরি ন্যারেশন যেমন টেনশন বিল্ডাপ, সাসপেন্স ক্রিয়েট করতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। এ-রোল টার্ম-টা সচরাচর ফিল্মেকিং এ এখন তেমন একটা ব্যবহার না হলেও বি-রোল টার্ম-টি কিন্ত আমরা অসংখ্যবার শুনে অভ্যস্থ হয়ে গেছি।
এ-রোলে ও বি-রোলে এর কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যবহার।
বি-রোল কিভাবে এ-রোলে ব্যবহার হয় তার কোন শেষ নেই তবে এর মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ব্যবহার নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করব।
সেটিং স্থাপন করতে:
অনেক সময় আমাদের প্রাইমারি ফুটেজ দিয়ে দিয়ে লোকেশন ও পরিবেশ রিভিল করা যায়না তাই তখন লোকেশন ও এনভারমেন্ট ক্লিয়ারিফাই করতে বি-রোল ফুটেজ ব্যবহার করা হয়।
টোন স্থাপন করতে:
বি-রোল ফুটেজ, এ রোল ফুটেজের টোন ক্রিয়েট করতে সাহায্য করে। এ-রোল ফুটেজের উপর নির্ভর করে প্রাসঙ্গিক অনেকগুলো বি-রোল ফুটেজ ব্যাবহার করার মাধ্যমে এ রোল ফুটেজের টোন ক্রিয়েট করা হয়।
ত্রুটি ডাকার জন্য:
ধরেন আপনি একটা ইন্টারভিউ শুট করছেন এখন হটাৎ যদি যদি কোন ভুল হয় তখন ভুলের অংশটি বাদ দিয়ে ফুটেজ জোড়া লাগালে দেখা যাবে ভিডিও জারিং হচ্ছে কাজেই আপনি অন্য এঙ্গেলের বি-রোল ব্যবহার করতে পারেন ভুলটি ডেকে দেবার জন্য। এছাড়াও বর্তমানে নানা ভাবে নানান রকম প্রয়োজনে বি-রোলকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
উপসংহার।
একটা দুর্দান্ত গল্প দৃশ্যায়নের জন্য দুটি অপরিহার্য ফুটেজ এর ধরন হলো এ-রোল ও বি-রোল। এ-রোল হচ্ছে মূলত মেইন ফুটেজ যেটি স্টোরির ন্যারেটিভ ক্যারি করে এবং বি-রোল হচ্ছে সাপ্লিমেন্টাল ফুটেজ যেটি এ-রোলকে কে ভিজুয়্যাল সাপোর্ট দেয়ার পাশাপাশি কন্টেক্সট প্রধান করে। এ-রোল স্ক্রিপ্টের উপর নির্ভরশিল হলেও বি-রোলের জন্য কিন্ত কোন ধরা-বাধা নিয়ম নেই, তাই বলে আবার যাচ্ছে তাই বি-রোল শুট করে এ-রোলে মার্জড করে দেবার কিন্ত কোন মানে হয়না। আপনার এ-রোলের পারপাস সার্ভড করে ভিজুয়্যালি যাতে সাপোর্ট দিতে পারে এরকম ভাবেই বি-রোল শুট করলেই সেটি অর্থবহ হবে।
যাইহোক ব্লগটি পড়ে ভালো লাগলে একটা শেয়ার দিতে পারেন, কমেন্ট করে আপনার মতামত জানাতে পারেন। এই ওয়েবসাইটে সাধারনত ফিল্মেকিং রিলেটেড কন্টেন্ট নিয়ে আলোচনা করা হয়।ফিল্মেকিং রিলেটেড কন্টেন্টে সবার আগে পেতে আমাদের গুগল নিউজে ফলো দিয়ে রাখতে পারেন।
Click Here |