৫টি বিষয়ে নতুন ক্যামেরা কেনার আগে খেয়াল রাখতে হবে

৫টি বিষয়ে নতুন ক্যামেরা কেনার আগে খেয়াল রাখতে হবে



দুনিয়ায় এমন মানুষ খুজে পাওয়া মুশকিল যে কিনা তার ক্যামেরা কেনার সময় এই দিধায় ছিলনা যে তার কোন ক্যামেরাটি কেনা উচিৎ? বিশেষ করে সেটি যদি হয় তার প্রথম ক্যামেরা। তবে আপনি যদি ক্যামেরা গিফট পেয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে জানাই অভিনন্দন। আপনি ইতিমধ্যে আপনার অজান্তেই একটা মুশকিল সময় পার করে ফেলেছে। যাইহোক এখন বাজারে নতুন টেকনোলজি আর নানা অপশনে ভরপুর অনেক ক্যামেরা রয়েছে। সব ক্যামেরার কাজ সমান নয় এবং এগুলোর ভেতরে রয়েছে নানা প্রকারভেদ। আমাদের আজকের ব্লগে জানার চেষ্টা করব ৫টি বিষয় যা ক্যামেরা কেনার আগে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে।

১/ আপনার ক্যামেরা কেনার উদ্দেশ্য কি?

ক্যামেরা কেনার আগে আপনার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা খুবই গুরুত্বপপূর্ন। সাধারনত আমাদের দেশে দেখা যায় বন্ধু বা পরিচিত বড় ভাই অমুক ক্যামেরা ব্যবহার করে। সেও তখন চায় ঐরকম ক্যামেরা নিতে বা দেখা যায় ক্যামেরা কেনার আগে পরিচিত যার ক্যামেরা আছে তাকে জিজ্ঞেস করে যে কোন ক্যামেরা কিনবে। এরকম করা মোটেও উচিৎ নয়। তবে হ্যা আপনার পরিচিত কারো কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন। তবে কোন ক্যামেরাটি কিনবেন সেটি আপনারই ভালোভাবে বুঝে শুনে তারপর কেনা উচিৎ। কেননা কোন ক্যামেরাটি কিনবো? প্রশ্নটি যত সহজ, উত্তর ততটাই কঠিন। ক্যামেরার বাটনে ক্লিক করলেই ফটোগ্রাফি/ভিডিওগ্রাফি হয়ে যায়না এর পেছনে প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি উদ্দেশ্য থাকে। বাজারে বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্যামেরা যন্ত্রপাতি রয়েছে। যেগুলো কেনার আগে ভালোমত খোঁজখবর করে নেয়া উচিত। অতএব প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিন আপনি কি ধরনের ফটোগ্রাফি/ভিডিওগ্রাফি করতে চাচ্ছেন। উদাহরন স্বরুপ যদি আমার কথা বলি তাহলে আমি একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এবং কাজের স্বার্থে আমি ফটোগ্রাফি এবং ভিডিওগ্রাফি দুইটাই করি। তাই আমার ক্ষেত্রে প্রয়োজন পরে একটা হাইব্রিড ক্যামেরা যেটা দিয়ে দুইটা কাজই সমান ভাবে করা যাবে। অপর দিকে আপনার কেস ভিন্ন হতে পারে তাই আপনার কাজের উদ্দেশ্য কি সেটা নির্ধারন করে ক্যামেরা বাছাই করা উচিৎ। অর্থাৎ আপনি যদি ভ্লগার হয়ে থাকেন  তাহলে ভ্লগিং ক্যামেরা, যদি ফটোগ্রাফি করতে চান তাহলে ফটোগ্রাফি ক্যামেরা বা প্রফেশনাল ভিডিওগ্রাফিতে থাকলে সিনেমা ক্যামেরা বাছাই করা উচিৎ।

২/ আপনার কি ফিচার্স প্রয়োজন?

ক্যামেরা কেনার আগে এটি আরেকটা গুরুত্বপূর্ন বিষয় যে আপনার কাজের ক্ষেত্রে কিকি ফিচার্স থাকলে যথেষ্ট। যেমন আপনি ফটোগ্রাফার বা ভিডিওগ্রাফার যাই হয়ে থাকেন। আপনি যে ধরনের ফটোগ্রাফি বা ভিডিওগ্রাফি করতে চান সে ধরনের ফটো/ভিডিও আপনার ক্যামেরা ক্যাপচার করতে সক্ষম কিনা বা ফটো তুলতে বা ভিডিও করতে যেসব সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে সেগুলো ক্যামেরা সাপোর্ট দেয় কিনা সে বিষয়ে বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে হবে। তবে এক্ষেত্রে একটা জিনিস বলে রাখা ভালো। আমাদের অনেকেরি ধারনা যে যতো বেশি মেঘা পিক্সেলের ক্যামেরা ততো ভালো ইমেজ কোয়ালিটি বোধহয় পাওয়া যায়। বিষয়টি আংশিক সত্য। বেশি মেঘ পিক্সেল থাকলে ভালো তবে মেঘা পিক্সেলের থেকে আমাদের ক্যামেরা সেন্সর প্রসেসরে বেশি গুরত্ব দিতে হবে। কেননা দিন শেষে সেন্সর প্রসেসর আমাদের কে ভালো ইমেজ কোয়ালিটি প্রধান করে থাকে। সাধারনত সেন্সর ইমেজের ডেটা কালেক্ট করে এবং প্রসেসর সেইটা ডাটাকে প্রসেস করে আউটপুট দেয়। তবে সেন্সরের দিকে আমাদের একটু বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে কারন  সেন্সর বিভিন্ন সাইজের হয় সেই সাইজের উপর নির্ভর করে লো-লাইট, ডায়নামিক রেঞ্জ ফোকাল লেন্থ কেমন হবে।  সাধারনত সেন্সর সাইজ যতো বড় হবে তো ভালো পার্ফরমেন্স ক্যামেরা থেকে পাওয়া যাবে। তাই আপনাদের উচিৎ সম্ভব হলে ফুল ফ্রেম সেন্সরের দিকে আগানো। যদিও ক্রপ সেন্সরের তুলোনায় ফুল ফ্রেম সেন্সরের ক্যামেরার দাম তুলোনা মূলক বেশি হয়ে থাকে।

৩/ আপনার বাজেট কতো?

আপনি কি উদ্দেশ্যে ক্যামেরা কিনতে চান এবং কিরকম ফিচারস আপনার প্রয়োজন সে সমন্ধে ক্লিয়ার হওয়ার পর আপনাকে দেখতে হবে যে আপনার বাজেট কতো?  স্বাভাবিক ভাবেই আপনার বাজেটের সাথে আপনি যে ফিচার্সের ক্যামেরা চাচ্ছেন তার একটা ইকুয়া্ল রিলেশন আছে। আপনার বাজেট যত বেশি হবে আপনানি ততো বেশি ফিচার্স সমৃদ্ধ ক্যামেরা কিনতে পারবেন। যাইহোক আপনার বাজেট ঠিক করার পর বাজেট অনুযায়ী আপনার চাহিদা পুরন করে এরকম কয়েকটা ক্যামেরার বাছাই করে ফেলুন। তবে ক্যামেরা বাছাই এর পূর্বে আমি আপনাকে পরামর্শ দিবো আপনার বাজেটের সম্পূর্ন ব্যয় ক্যামেরার উপর না করার জন্য। এক্ষেত্রে আপনি জুবায়ের তাকুলদার এর ৭০-২০-১০ রুলস ফলো করতে পারেন। অর্থাৎ আপনার বাজেটের ৭০% ব্যয় করবেন ক্যামেরা লেন্সের জন্য। ২০% ব্যয় করবেন অডিও এবং লাইটের জন্য বাকি ১০% ব্যয় করবেন অন্যান্য এক্সেসোরিজে যেমন ব্যাগ ট্রাইপড মেমোরি কার্ড ইত্যাদির জন্য। আপনার সম্পূর্ন বাজেট কখনো ক্যামেরা লেন্সের পেছনে ব্যয় করবেন না। তবে আপনার যদি আগে থেকে অডিও, লাইটিং কিংবা এক্সেসোরিজ থেকে থাকে সেক্ষেত্রে চাইলে বাজেট টা নিয়ে আপনি ক্যামেরা এবং লেন্সে এর পেছনে ব্যয় করতে পারেন।

৪/ ক্যামেরা ব্র্যান্ড নির্বাচন করুন

যেসব কোম্পনি ক্যামেরা মেনুফেকচার করে তারা সবাই ভালো ক্যমেরা বানাচ্ছে কিন্ত তারপরও ক্যামেরা কেনার আগে আমি আপনাদের সাজেস্ট করব জনপ্রিয় যে ক্যামেরা ব্র্য্যান্ড গুলো আছে সেখান থেকে ক্যামেরা কেনার জন্য।  এতে করে আপনা্রা বিভিন্ন ধরনের সাপোর্ট যেমন বিভিন্ন ভ্যারিয়েশনের লেন্স ব্যবহারঅনলাইন ফোরাম এবং কমিউনিটি হতে সাপোর্ট, প্রচুর কালার প্রিসেট ক্যমেরা সাপোর্ট করে এরকম অনেক এক্সেসোরিক ব্যবহারের সুবিধা পেয়ে যাবেন। এছাড়াও প্রচলিত জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ক্যামেরা কিনলে পরবর্তিতে রিপেয়ার বা সার্ভিস করার প্রয়োজন পরলে সেগুলো সহজেই করা যায় যা তুলনা মূলক কম প্রচলিত ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে সম্ভব হয়না। বাংলাদেশের সব চেয়ে বেশি জনপ্রিয় তিনটি ক্যামেরা ব্রান্ড হলো ক্যানন, নিকন এবং সনি।

৫/ ক্যামেরার রিভিউ দেখেন

প্রত্যেকটা ক্যামেরা ব্রান্ডই তাদের নতুন ক্যামেরা বাজারে ছাড়ার পর ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে চটকদার বিজ্ঞাপন দেয়। এসব বিজ্ঞাপনে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যায়ে প্রফেশনালদের হায়ার করা হয়।কাজেই বিজ্ঞাপনে কিংবা ক্যামেরা ব্রান্ড কর্তৃক ক্যামেরা সমন্ধে যে দাবি করা হয় সেটি হয় বেস্ট কেস সিনারিও এবং অনেকাংশে বাড়িয়ে চড়িয়ে বলা। ফলে আপনি যখন ক্যামেরা কিনবেন তখন ঐরকম পার্ফরমেন্স নাও পেতে পারেন। এছাড়াও ক্যামেরা ব্রান্ড গুলো কখনই তাদের ক্যামেরার খারাপ দিক গুলো উল্ল্যেখ করেনা। এরকম অবস্থায় আপনার উচিৎ হবে ব্লগ পড়ে কিংবা ইউটুবে রিভিউ ভিডিও দেখে তারপর ক্যামেরা কেনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া। এতে করে আপনি বাস্তব ভিত্তিক ক্যামেরা সমন্ধে একটি ধারনা পাওয়ার পাশাপাশি ক্যামেরা যে খারাপ দিকগুলো আছে সেসব বিষয়েও অবগত থাকতে পারবেন। তবে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে আপনি যে মাধ্যমে রিভিউ টি পরছেন সেটি বিশ্বাসযোগ্য কিনা। বলাবাহুল্য অনেকে আবার স্পন্সর এবং এফিলিয়েটের এর স্বার্থে পক্ষপাতদুষ্ট রিভিউ দেয়।

উপসংহার

আশকরি ব্লগের এই পর্যায় এসে আপনারা মোটামুটি একটা ধারনা পেয়েছেন যে আপনাদের ক্যামেরা কেনার আগে কোন কোন বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। ব্লগটি এমন ভাবেই লেখা হয়েছে যাতে একজন বিগেইনার থেকে এক্সপার্ট সবাই যাতে ব্লগটি পড়ে উপকৃত হয়। কারন আপনি যদিও প্রথমবার ক্যামেরা কিনে থাকেন তখনও আপনার ব্লগটি কাজে লাগবে বা পরবর্তীতে এক্সপার্ট হয়ে গেলে তখনও ক্যামেরা অপডেট করার সময় ব্লগটি আপনাদের কাজে আসবে। আমাদের একটা ধারনা আছে যে আমরা মনে করি যতো দামি ক্যামেরা হবে ততো বোধহয় ভালো ইমেজ ক্যাপচার করা যাবে অথবা অমুক ক্যামেরা দিয়ে ফটোগ্রাফি বা ভিডিওগ্রাফি করে আমিও ক্যামেরাটা কিনতে পারলে ওনার মতো ফটোগ্রাফি বা ভিডিওগ্রাফি করতে পারবো। ধারনাটি একদমি ভুল। কথাটি আমি বলছিনা বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফটোগ্রাফার প্রীতো রেজা একটা শোতেকোন ক্যামেরা কেনা উচিৎএরকম একটা প্রশ্নের উত্তরে কথাটি বলেছিলেন "আপনি আপনার প্রিয়ো লেখককে কখনো প্রশ্ন করে যে কোন কলম দিয়ে উপন্যাসটি লিখেছে? তাহলে ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে আমাকে কেন জিজ্ঞেস করেন যে কোন ক্যামেরা দিয়ে ছবিটি তুলেছি?" ওনার কথাটি বলার উদ্দেশ্য ছিলো এটি বোঝানো যে একটা ভালো ফটোগ্রাফির জন্য প্রয়োজন ফটোগ্রাফির জ্ঞান ক্যামেরা হলো একটা টুল মাত্র। দিন শেষে ফটোগ্রাফি বা ভিডিওগ্রাফি সম্মন্ধে জ্ঞান থাকলে আপনি কম দামি ক্যামেরা দিয়েও ভালো ইমেজ ক্যাপচার করতে পারবেন। আবার আপনার যদি ফটোগ্রাফি বা ভিডিওগ্রাফি সম্মন্ধে জ্ঞান না থাকে তাহলে আপনাকে পেশাদার সেটাপ দিলেও ভালো ইমাজ ক্যাপচার করতে পারবেন না। তাই আপনি যে ক্যামেরাই কেনেন না কেনো ফটোগ্রাফি বা ভিডিওগ্রাফি সম্মন্ধে জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়।  আমরা এই ওয়েবসাইটে ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি ফিল্মেকিং রিলেটেড কন্টেন্ট নিয়ে ব্লগ বানাই। আপনি যদি এগুলো শিখতে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট'টি গুগল নিউজে ফলো দিয়ে রাখতে পারেন এবং আগের ব্লগ গুলো পড়তে পারেন। আমাদের একটা ইউটুব চ্যানেল আছে যেখানে আমরা নিয়মিত ফিল্মেকিং এর পাশাপাশি ক্যামেরা, লেন্স ইত্যাদি নিয়ে ভিডিও বানাই চাইলে ভিজিট করে দেখতে পারেন। 

إرسال تعليق

أحدث أقدم